কাতার বিশ্বকাপে ম্যাচ পরিচালনায় নিয়োজিত থাকবেন সারা বিশ্বের ৩৬ জন রেফারি, ৬৯ জন সহকারী রেফারি ও ২৪ জন ভিডিও ম্যাচ অফিসিয়াল। তাদের সঙ্গে সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করবেন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মরিয়মনগর ইউনিয়নের বালুগোট্টা গ্রামের ছেলে শিয়াকত আলী।
মঙ্গলবার (৪ সেপ্টেম্বর) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মরিয়মনগর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য কামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘শিয়াকত আলী আমার গ্রামেরই ছেলে। তার বাবা মো. রফিকুল আলম সওদাগর। তিনি দুই বছর আগে মারা গেছেন। শিয়াকত ২০১৩ সালে শ্রমিক হিসেবে কাতারে গিয়েছিল। সেখানে বার্সেলোনার একটি রেফারি অন্বেষণ কার্যক্রমে অংশ নিয়েই কপাল খুলে যায় তার।’
কামাল উদ্দিন আরও বলেন, ‘শিয়াকত স্কুল পর্যায়ে অ্যাথলেট এবং ভালো সাঁতারু ছিল। ২০১৩ সালে জীবিকার খোঁজে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে শ্রমিক ভিসায় কাতারে চলে যায়। ওই সময় স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনার একটি ফুটবল প্রজেক্ট শুরু হয় কাতারে। প্রজেক্টের জন্য স্কুলে স্কুলে গিয়ে খেলোয়াড় সংগ্রহের কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে বার্সেলোনা প্রজেক্টের সিইওর কাছে। বাংলাদেশে স্কুলে ক্রীড়া শিক্ষকতা ও রেফারিংয়ের কথা শুনে ওই সিইও সম্মতি জানান শিয়াকতকে।’
‘শিয়াকত তখন খেলোয়াড় সংগ্রহের পাশাপাশি কয়েকটি ম্যাচে খেলাও পরিচালনা করে। বার্সেলোনার সেই প্রজেক্ট শেষে তিনি কাজের সুযোগের জন্য আবেদন করেন কাতার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনে। সেখানেও মেলে সবুজ সঙ্কেত। প্রথমে কাতার ফুটবলে ১৬ দিনের রেফারি প্রশিক্ষণ শেষ করেন। এরপর কাতারের স্পায়ার একাডেমি থেকে রেফারিং অ্যান্ড স্পোর্টস সাইকোলজিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরই মধ্যে রেফারিংয়ের ওপর সি ও ডি ডিপ্লোমা কোর্স শেষ করেছেন। কাতার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনে বর্তমানে তিনি কাজ করছেন সহকারী রেফারি হিসেবে।’
জানা যায়, ফুটবলে কাতার বর্তমান এশিয়া চ্যাম্পিয়ন। ২০২২ বিশ্বকাপের এই স্বাগতিক দেশটিতে রেফারিদেরও পারিশ্রমিক ভালো। ফুটবল রেফারি হয়ে শিয়াকত প্রতি মাসে প্রায় আড়াই হাজার ডলার পান পারিশ্রমিক পান।
শিয়াকতের বড় ভাই লিয়াকত আলী জানান, খেলাধুলার প্রতি ভালোবাসাই পাল্টে দিয়েছে শিয়াকত আলীর জীবন। সাধারণ একজন শ্রমিকের বদলে তিনি এখন মাঠের মানুষ। কাতারই শুধু নয়, দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন অন্য আরব দেশও। খেলা পরিচালনার জন্য তিনি জর্ডান, কুয়েত, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান ও বাহরাইন সফর করেছেন। সাবেক রেফারি মরহুম মনিরুল ইসলামের অনুরোধে ২০১৬ সালে বাংলাদেশে এসে দুটি ম্যাচও পরিচালনা করেছিলেন শিয়াকত।
কাতার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনে শিয়াকতকে সবাই চেনে বাঙালি কুরা হাকাম মোহাম্মদ শেখ আলী নামে। কুরা অর্থ ফুটবল, হাকাম অর্থ রেফারি। এ পরিচয়েই তিনি পরিচালনা করেছেন প্রায় দুই হাজার ফুটবল ম্যাচ। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক ম্যাচের সংখ্যা ১৫০টি।
ক্রীড়ার সঙ্গে সারাজীবন জড়িত থাকবেন জানিয়ে শিয়াকত আলী জানান, রেফারির কাজটা চালিয়ে যাব। দিন দিন রেফারিতে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব, দেশকে তুলে ধরার জন্য, এটা আমার পরিকল্পনা। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ও রেফারি বিভাগ কোনো সহযোগিতা চাইলে, আমি যেকোনো মুহূর্তে সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত ও চেষ্টা থাকবে। ভবিষ্যতে দেশে একটি ফুটবল একাডেমি করতে চাই। ইউরোপ একাডেমির মাধ্যমে যেখানে একটি মেধাবীদের প্রজেক্ট হয়। যেখানে খেলোয়াড়দের সঙ্গে রেফারিদের মেধাগুলো যাচাই-বাছাই করা হবে।
চট্টগ্রামে স্কুল-কলেজ পর্যায়ে ফুটবল ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রামে থাকাকালীন সময়ে স্কুল ও কলেজের হয়ে ফুটবল খেলাগুলো খেলেছি। স্কুল ও কলেজে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সঙ্গেও জড়িত ছিলাম। যদিও জাতীয় পর্যায়ে আমার কোনো অর্জন নেই। কিন্তু বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়ে আমি গর্বিত। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়ে আমি গর্বিত।
উল্লেখ্য, জানা যায়, খেলোয়াড় কোটায় ভর্তি হয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে। মনিয়মনগর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও রাঙ্গুনিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন।
পাঠকের মতামত